বৈশাখের রঙ, ঐতিহ্য ও উৎসবের গল্প
Customise Consent Preferences

We use cookies to help you navigate efficiently and perform certain functions. You will find detailed information about all cookies under each consent category below.

The cookies that are categorised as "Necessary" are stored on your browser as they are essential for enabling the basic functionalities of the site. ... 

Always Active

Necessary cookies are required to enable the basic features of this site, such as providing secure log-in or adjusting your consent preferences. These cookies do not store any personally identifiable data.

No cookies to display.

Functional cookies help perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collecting feedback, and other third-party features.

No cookies to display.

Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics such as the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.

No cookies to display.

Performance cookies are used to understand and analyse the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.

No cookies to display.

Advertisement cookies are used to provide visitors with customised advertisements based on the pages you visited previously and to analyse the effectiveness of the ad campaigns.

No cookies to display.

বৈশাখের রঙ, ঐতিহ্য ও উৎসবের গল্প

বৈশাখের রঙ, ঐতিহ্য ও উৎসবের গল্প

পহেলা বৈশাখ মানেই নতুন বছরের নতুন শুরু, আনন্দ আর উৎসবের এক দারুণ অনুভূতি। এদিন বাঙালির ঘরে ঘরে জমে ওঠে উৎসবের আমেজ—নতুন পোশাক, হালখাতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ আর নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। সময়ের সঙ্গে বদলেছে ফ্যাশন আর উদযাপনের ধরন, কিন্তু ঐতিহ্যের শিকড় এখনো মজবুত। লাল-সাদা পোশাকের ঐতিহ্য থেকে শুরু করে আধুনিক ট্রেন্ড—বৈশাখী ফ্যাশনের এই বিবর্তনই তুলে ধরে আমাদের সংস্কৃতির গভীরতা। চলুন, জানি বৈশাখের রঙ, ইতিহাস, ট্রেন্ড আর উৎসবের গল্প!

পহেলা বৈশাখ ও বাঙালির সংস্কৃতি

পহেলা বৈশাখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন বছর শুরুর দিন নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর প্রাণের উৎসব। এই দিনটি মানেই নতুন আশা, নতুন রঙ, আর বাঙালিয়ানার এক অনন্য প্রকাশ।

বছরের প্রথম দিনটি উদযাপন বাঙালি সমাজে বহু পুরনো এক রীতি। কৃষিভিত্তিক সমাজে এই দিনটিকে নতুন বছরের হিসাব শুরুর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে ব্যবসায়ীরা হালখাতা খুলে পুরনো দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে নতুন বছরের শুভসূচনা করতেন। এখনো অনেক জায়গায় এই প্রথা টিকে আছে, আর সঙ্গে যোগ হয়েছে উৎসবের নানা নতুন মাত্রা।

এই দিনে বাঙালিরা পরেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক—নারীরা শাড়ি, বিশেষ করে লাল-সাদা শাড়ি, আর পুরুষেরা পরে পাঞ্জাবি বা ফতুয়া। সকালবেলা মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হয় উদযাপন, যেখানে রঙিন মুখোশ, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম, আর বিভিন্ন প্রতীকী আয়োজন থাকে। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে বৈশাখী মেলা ঘোরা, পান্তা-ইলিশ খাওয়া, আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াই এই দিনের বিশেষ আনন্দ। সময় বদলালেও পহেলা বৈশাখের উৎসবের মূল রঙ এখনো একই রয়ে গেছে—এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব, যা ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে নতুন রূপে ফিরে আসে প্রতি বছর।

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস

পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরনো, এর শেকড় মুঘল আমল পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৫৮৪ সালে সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন, যা কৃষকদের জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে আসে। সেই সময় কৃষকদের খাজনা দিতে হতো হিজরি সনের হিসেবে, যা চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় ফসল তোলার সময়ের সঙ্গে মিলত না। এই সমস্যার সমাধানেই বাংলা সনের প্রচলন হয়, এবং নতুন ফসল ঘরে তোলার পর খাজনা পরিশোধের দিনটিই হয়ে ওঠে উৎসবের উপলক্ষ। ব্যবসায়ীরাও এই দিনে পুরনো দেনা-পাওনার হিসাব মিটিয়ে নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন, যাকে বলা হয় হালখাতা। ধীরে ধীরে এটি শুধু ব্যবসায়ীদের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থেকে সবার জন্য আনন্দের দিন হয়ে ওঠে।

wikipedia

Photo Credit: Wikipedia

আধুনিককালে পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা, যা শুরুতে “আনন্দ শোভাযাত্রা” নামে পরিচিত ছিল। ১৯৮০-এর দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা রঙিন মুখোশ, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম আর প্রতীকী প্রদর্শনীর মাধ্যমে এটি শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে এর নামকরণ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা, যার অর্থ শুভ শক্তির আহ্বান। সময়ের সঙ্গে এই শোভাযাত্রা শুধু আনন্দ নয়, বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠে। এখন এটি ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং প্রতি বছর হাজারো মানুষ বৈশাখের সকাল শুরু করে এই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে। পহেলা বৈশাখ তাই শুধু নতুন বছরের সূচনা নয়, বরং বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রকাশ।

বৈশাখী রঙের ভাষা: লাল-সাদার ঐতিহ্য ও নতুন ট্রেন্ড

বৈশাখ মানেই রঙের উৎসব, আর এই উৎসবের সবচেয়ে চেনা রং লাল ও সাদা। বছরের প্রথম দিনটিতে লাল-সাদার এই ঐতিহ্য শুধু ফ্যাশনের অংশ নয়, বরং এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও আবেগের প্রতিচিত্র।

লাল রং শক্তি, উচ্ছ্বাস আর নবজীবনের প্রতীক। বাংলা নববর্ষের উৎসবে লালের উজ্জ্বল উপস্থিতি নতুন বছরের প্রাণচাঞ্চল্য ও ইতিবাচকতার বার্তা দেয়। অন্যদিকে, সাদা রং শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক। লালের শক্তি আর সাদার নির্মলতার এই মিশ্রণই বৈশাখের সাজে বাঙালিয়ানার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। ঐতিহ্যগতভাবে নারীরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি আর পুরুষেরা লাল বা সাদা পাঞ্জাবিতে সাজেন। তবে সময়ের সঙ্গে বৈশাখী ফ্যাশনে এসেছে নতুন ট্রেন্ড।

মেয়েদের বৈশাখী পোশাক

এখন বৈশাখী পোশাকে শুধু লাল-সাদা নয়, যুক্ত হচ্ছে আরও নানা রঙের ছোঁয়া। উজ্জ্বল হলুদ, গাঢ় নীল, লাল, সবুজ বা কমলা রঙের ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ, কিংবা নকশাকাটা পোশাক তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। মেয়েদের শাড়িতে দেখা যাচ্ছে সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি, ফোক ডিজাইন বা মসলিনের হালকা আরামদায়ক টেক্সচার। ছেলেদের জন্যও ট্র্যাডিশনাল পাঞ্জাবির পাশাপাশি ঢিলেঢালা কুর্তা, ফতুয়া আর আলিগর বা চওড়া পাজামার ফ্যাশন চলছে।

আরেকটি নতুন ট্রেন্ড হলো ফ্যামিলি ম্যাচিং আউটফিটমা-মেয়ে বা বাবা-ছেলের জন্য একই ডিজাইনের বৈশাখী পোশাক এখন বেশ জনপ্রিয়। কিশোর-কিশোরীদের ফ্যাশনেও এসেছে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ স্টাইল—সাদা স্কার্ট বা পালাজোর সঙ্গে লাল টিউনিক, বা লাল টপের সঙ্গে সাদা কটন প্যান্ট। অ্যাক্সেসরিতেও দেখা যায় বৈচিত্র্য—কাঁসার গয়না, কাঠের চুড়ি, হাতে আঁকা ওড়না বা ব্যাগ সবই বৈশাখী লুকে যোগ করছে নতুন মাত্রা।

বৈশাখী রঙের ভাষা তাই কেবল লাল-সাদার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুনত্বের মিশেলে বৈশাখী ফ্যাশন আরও রঙিন হয়ে উঠেছে। তবে দিনের শেষে, বৈশাখ মানে নিজের মতো করে সাজা, আনন্দ ভাগ করে নেওয়া আর বাঙালিয়ানার রঙে রাঙিয়ে তোলা প্রতিটি মুহূর্ত!

মেয়েদের বৈশাখী ফ্যাশন

গরমে আরামদায়ক ফেব্রিক: বৈশাখী ফ্যাশনের মূল চাবিকাঠি

গরমের মধ্যে বৈশাখ উদযাপন করতে হলে আরামদায়ক ফেব্রিকই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৈশাখের সকাল মানেই রোদ, ভিড় আর সারাদিনের উদযাপন—তাই ফ্যাশনের পাশাপাশি আরামের দিকটাও ভাবতে হয়। কটন, লিনেন, ভিসকোস, খাদি বা মসলিনের মতো হালকা ফেব্রিক বৈশাখের জন্য আদর্শ। এসব ফেব্রিকে বাতাস চলাচল সহজে করে, ঘাম শোষণ করে আর শরীরকে ঠান্ডা রাখে। বিশেষ করে ঢিলেঢালা কাটের কুর্তা, কামিজ, শাড়ি বা পাঞ্জাবি বেছে নিলে আরাম যেমন থাকবে, তেমনই ফ্যাশনেও স্টাইলিশ লাগবে।

এখন বৈশাখী ফ্যাশনে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশ্রণ দেখা যায়। হাতে আঁকা নকশা, ব্লক প্রিন্ট বা ন্যাচারাল ডাই করা কাপড়ের কদর বাড়ছে। গামছা প্যাটার্ন, ফুলের মোটিফ বা লোকজ শিল্পের ছোঁয়া থাকলেও কাট ও ডিজাইনে আসছে নতুনত্ব। তাই বৈশাখের সাজ শুধু রঙিন পোশাকের ব্যাপার নয়, আরামদায়ক ফেব্রিক বেছে নেওয়াটাই ফ্যাশনের মূল চাবিকাঠি!

আধুনিক বৈশাখ: সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল উদযাপন

বৈশাখ উদযাপনের ধরন বদলেছে, এখন উৎসব শুধু মাঠে-মেলায় নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও সমানভাবে জমে ওঠে। আগে মানুষ রমনা পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বা লোকাল মেলায় গিয়ে বৈশাখ পালন করত, এখন সেসবের পাশাপাশি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে। বৈশাখ এলেই শুরু হয় #PohelaBoishakh, #BoishakhiLook, #BoishakhVibes-এর মতো ট্রেন্ড। নতুন বৈশাখী পোশাকে ছবি তুলে পোস্ট করা, ফিল্টার আর ইফেক্ট দিয়ে সাজানো রিল বানানো, এমনকি ভার্চুয়াল শোভাযাত্রা বা ডিজিটাল পটচিত্র তৈরি করাও এখন উদযাপনের অংশ।

মেয়েদের বৈশাখী পোশাক

অনলাইন শপিংয়ের কারণে বৈশাখী ফ্যাশনও এখন হাতের মুঠোয়। আগের মতো দোকানে গিয়ে কেনাকাটার চেয়ে অনেকে এখন ডিজিটাল ক্যাটালগ দেখে শাড়ি, পাঞ্জাবি, পাজামা, টিশার্ট, সালোয়ার কামিজ, টপস/কুর্তি অর্ডার করে নিচ্ছেন। এমনকি বৈশাখের স্পেশাল খাবারের ডেলিভারিও পাওয়া যাচ্ছে বাসায় বসেই।

বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে সরাসরি দেখা না হলেও ভিডিও কল, লাইভ স্ট্রিমিং আর ভার্চুয়াল কনসার্টের মাধ্যমে এখন দূর থেকেও বৈশাখের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যায়। ডিজিটাল যুগে বৈশাখ পালনের রীতি বদলেছে, তবে উৎসবের অনুভূতি আগের মতোই প্রাণবন্ত!

বৈশাখ মানেই শুধু নতুন বছর নয়, নতুন আশারও সূচনা। এই দিনটিতে আমরা যেমন আমাদের ঐতিহ্যকে উদযাপন করি, তেমনই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন ট্রেন্ডও গ্রহণ করি। লাল-সাদার শোভা, আরামদায়ক ফেব্রিক, মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উৎসব ভাগ করে নেওয়া—সব মিলিয়ে বৈশাখ এখন এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। কিন্তু দিনের শেষে, আসল ব্যাপার হলো ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো, হাসিমুখে উৎসব উপভোগ করা আর আমাদের সংস্কৃতিকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরা। শুভ নববর্ষ!

  • ফাতেমাতুজ্জোহরা আফিয়া
  • No products in the cart.
Filters
x