ফল মানেই প্রকৃতির নতুন রঙ আর আবহাওয়ার বদল। এই সময়ে পোশাকে আসে আরাম আর স্টাইলের নতুন ছোঁয়া। খুব ভারী না আবার একেবারেই হালকা না, এমন পোশাকই এখন বেশি চলছে। তাই ট্রেন্ডেও দেখা যায় ভিন্ন রঙ, ডিজাইন আর ফেব্রিকের ব্যবহার। আপনি যদি জানতে চান ফলের ফ্যাশনে কোন পোশাকগুলো এখন ইন-স্টাইল, তাহলে এই ব্লগ আপনার জন্য।
কেন ফল মৌসুমে ফ্যাশনে আসে ভিন্নতা
ফল মৌসুমটা বছরের অন্য সময়ের থেকে আলাদা। গরমের প্রচণ্ড তাপ কমে আসে, আবার শীতের ভাবটাও তখন তেমন একটা আসে না। আবহাওয়া থাকে একেবারে মৃদু ও আরামদায়ক। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পোশাকেও আসে ভিন্নতা।
খুব পাতলা কাপড় যেমন কটন বা লিনেন গরমে ভালো লাগে, কিন্তু ফলে সেগুলো অনেক সময় যথেষ্ট হয় না। আবার ভারী উলের কাপড় বা জ্যাকেটও তখনো প্রয়োজন হয় না। তাই এই সময়ে ফ্যাশন ট্রেন্ডে চলে আসে মাঝামাঝি ধরনের ফেব্রিক যেমন ভিসকস, মসলিন, জুম, সাটিন, কটন-সিল্ক ব্লেন্ড বা হালকা জ্যাকার্ডের ব্যবহার। এছাড়া, ফলে প্রকৃতির রঙও বদলে যায়। তাই পোশাকে উঠে আসে উষ্ণ টোন, আর্থি কালার, গানাশ (Ganache)/ চকলেট ব্রাউন, লালচে কমলা (Urgent Orange), গাঢ় হলুদ, চেরি লাল, গাড় গোলাপি ও বেগুনির মিশ্রণ, ধূসর কালো, পান্না সবুজ, লেবু রঙ, লালচে বাদামী, মধু, জামরঙ, নেভি ব্লু, পপ-পিঙ্ক, চিলি রেড। এসব রঙ শুধু আরামদায়কই নয় বরং মৌসুমের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়।
ফলে ফ্যাশনের ভিন্নতা আসার মূল কারণ হলো আবহাওয়ার পরিবর্তন, আরামদায়ক ফেব্রিকের চাহিদা, আর মৌসুমি রঙের ব্যবহার। এ তিনটির সমন্বয়েই এই সময়ে পোশাকে তৈরি হয় নতুন ট্রেন্ড।
ফলের ফ্যাশন ট্রেন্ডে যে রঙগুলো জনপ্রিয়
ফল মৌসুমে পোশাকে রঙের ব্যবহার একেবারেই আলাদা হয়ে যায়। এই সময়ের ফ্যাশনে গাঢ়, উষ্ণ আর কিছুটা উজ্জ্বল টোন বেশি নজর কাড়ে। কারণ, হালকা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে এমন রঙ শুধু চোখে সুন্দরই লাগে না, বরং স্টাইলেও এনে দেয় নতুন মাত্রা। ২০২৫ সালের ফলের কালার প্যালেটেও আছে নানা চমক। যেমন—
- গানাশ বা চকলেট ব্রাউন – আর্থি টোন হিসেবে সবসময়ই ক্ল্যাসি লাগে, ক্যাজুয়াল থেকে ফরমাল সব লুকে মানিয়ে যায়।
- উজ্জ্বল কমলা (Urgent Orange) – এনার্জেটিক আর ফ্রেশ লুকের জন্য পারফেক্ট।
- গাঢ় হলুদ আর মধু রঙ – উষ্ণতা যোগ করে, আবার আউটিং বা ক্যাজুয়াল ওয়্যারে বেশ মানায়।
- চেরি লাল, চিলি রেড আর জামরঙ – স্টেটমেন্ট কালার, যেকোনো পার্টি বা ফেস্টিভ আউটফিটে ঝলমল করে ওঠে।
- গাঢ় গোলাপি ও বেগুনির মিশ্রণ, পপ–পিঙ্ক – ট্রেন্ডি, মডার্ন লুকের জন্য দারুণ।
- ধূসর কালো আর নেভি ব্লু – যারা লো-কি (low-key) অথচ স্টাইলিশ থাকতে চান, তাদের জন্য সেরা।
- পান্না সবুজ আর লেবু রঙ – প্রকৃতির ছোঁয়া এনে দেয়, দিনের আউটফিটে ফ্রেশনেস যোগ করে।
- লালচে বাদামী – একেবারেই শরতের মতো উষ্ণতা দেয়, সেজন্যই এ মৌসুমে বেশ জনপ্রিয়।
সব মিলিয়ে দেখা যায়, ফলে পোশাকের রঙে থাকে উষ্ণতা, গভীরতা আর উজ্জ্বলতার মিশ্রণ। এই রঙগুলো শুধু ট্রেন্ডি নয় বরং যেকোনো অনুষ্ঠানে কিংবা ক্যাজুয়াল লুকেও আপনাকে সবার থেকে আলাদা করে তুলতে সাহায্য করবে।
কোন ফেব্রিক এখন ইন-স্টাইল
ফল মৌসুমে আবহাওয়া থাকে একেবারেই আরামদায়ক না খুব গরম, না খুব ঠাণ্ডা। তাই এই সময়ের পোশাকে দরকার এমন ফেব্রিক যা হালকা, ব্রিদেবল এবং সহজে বহনযোগ্য। এ কারণেই ফ্যাশন ট্রেন্ডে এখন মাঝারি- বুননের ফেব্রিক বেশি জনপ্রিয়। ভিসকস, ও মসলিন এর মধ্যে অন্যতম, যা নরম ও ফ্লোয়ি হওয়ায় দিনে পরতে আরামদায়ক এবং আউটিং বা ফেস্টিভ লুকেও মানিয়ে যায়। কটন-সিল্ক ব্লেন্ডও বেশ ট্রেন্ডি, কারণ এতে কটনের আরাম আর সিল্কের হালকা শাইনের সুন্দর মিশ্রণ থাকে।
যারা একটু ড্রেসি বা ফর্মাল লুক চান, তাদের জন্য ক্রেপ, জুম ও জর্জেট হতে পারে দারুণ পছন্দ। পাশাপাশি লেয়ারিংয়ের জন্য হালকা জ্যাকার্ড ফেব্রিক এখন অনেকেই ব্যবহার করছেন। এর পাশাপাশি ফ্যাশনে সাস্টেইনেবল ফেব্রিকের চাহিদাও বাড়ছে যেমন রিসাইক্লড বা পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইল। সব মিলিয়ে বলা যায়, ফলে ফেব্রিকের ট্রেন্ড হলো আরাম, বহনযোগ্যতা এবং স্টাইলিশ ছোঁয়ার সঠিক সমন্বয়।
ফল মৌসুমে মেয়েদের জন্য ইন-স্টাইল পোশাক
ফল মৌসুমে মেয়েদের পোশাকে থাকে আরাম আর স্টাইলের সুন্দর মিশ্রণ। আবহাওয়া মৃদু হওয়ায় খুব ভারী পোশাক দরকার হয় না, আবার একেবারে হালকাও মানায় না। তাই ক্যাজুয়াল, অফিস কিংবা আড্ডা সব জায়গার জন্যই এই সময়ের ফ্যাশনে পাওয়া যায় নানা রকম ট্রেন্ডি অপশন।
ক্যাজুয়াল লুকের জন্য টিউনিক বা কামিজ
দিনের বেলা বা হালকা আউটিংয়ে টিউনিক বা কামিজ একেবারে পারফেক্ট। কটন, ভিসকস, হালকা জর্জেট বা মসলিন ফেব্রিকের টিউনিক বা কামিজ আরামের পাশাপাশি লুকেও দেয় ন্যাচারাল স্টাইল। জিন্স, লেগিংস বা পালাজোর সঙ্গে এগুলো সহজেই মানিয়ে যায়।
অফিস বা ফরমাল লুকের জন্য শার্ট-টপ
অফিসে চাই আরাম আর প্রফেশনাল লুক। এজন্য কটন, জুম বা ক্রেপ ফেব্রিকের শার্ট-টপ হতে পারে সেরা পছন্দ। এগুলো স্লিম-ফিট প্যান্ট বা স্কার্টের সঙ্গে দারুণ মানায় এবং ফর্মাল ইমপ্রেশন বজায় রাখে। চাইলে হালকা ব্লেজারও যোগ করা যায় লেয়ারিং হিসেবে।
আড্ডা ও আউটিংয়ের জন্য ওয়েস্টার্ন ফিউশন
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা আউটডোর আউটিংয়ের জন্য ওয়েস্টার্ন ফিউশন এখন বেশ ট্রেন্ডি। যেমন– টপসের সঙ্গে ডেনিম, জাম্পসুট বা মিডি-ড্রেস। চাইলে আবার কুর্তি বা টিউনিকের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন কাটের জ্যাকেটও পরা যায়। এই ধরনের ফিউশন স্টাইল মেয়েদের লুককে করে তোলে আধুনিক ও ট্রেন্ডি।
সব মিলিয়ে ফল মৌসুমে মেয়েদের পোশাকে মূল বিষয় হলো আরাম বজায় রেখে স্টাইলিশ থাকা।
ফল মৌসুমে পুরুষদের জন্য ইন-স্টাইল পোশাক
ফল মৌসুমে পুরুষদের পোশাকেও আসে ভিন্নতা। আবহাওয়া যেহেতু বেশ স্নিগ্ধ থাকে, তাই এই সময়ে পুরুষরা চাইলে একসঙ্গে আরাম আর স্টাইল বজায় রাখতে পারেন। ক্যাজুয়াল থেকে ফরমাল, আবার ট্র্যাডিশনাল সব ধরনের লুকেই ফলের ফ্যাশনে রয়েছে নতুন নতুন ট্রেন্ড।
ক্যাজুয়াল টি-শার্ট ও শার্ট
দিনের আড্ডা, আউটডোর প্ল্যান বা ভ্রমণে ক্যাজুয়াল টি-শার্ট আর শার্টই সেরা পছন্দ। কটন, ভিসকস ফেব্রিকের হাফ/ফুল স্লিভ টি-শার্ট, প্রিন্টেড শার্ট বা লাইট ডেনিম শার্ট ফলের মৌসুমে আরামদায়ক ও স্টাইলিশ লুক দেয়। চিনোস বা ডেনিম প্যান্টের সঙ্গে এগুলো সহজেই মানিয়ে যায়।
ফরমাল শার্ট ও চিনোস প্যান্ট
অফিস বা মিটিংয়ের জন্য ফরমাল শার্ট সবসময়ই প্রথম পছন্দ। তবে ফলে হালকা ফেব্রিকের শার্ট বেছে নিলে আরামে কোনো কমতি থাকে না। চিনোস প্যান্টের সঙ্গে সিঙ্গেল কালারের শার্ট দারুণ মানায় এবং প্রফেশনাল লুকও বজায় রাখে। চাইলে হালকা ব্লেজার ব্যবহার করে ফ্যাশনে যোগ করা যায় বাড়তি স্টাইল।
ট্রেন্ডি পাঞ্জাবি ও ফিউশন লুক
ফল মৌসুমে উৎসব বা পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য পাঞ্জাবি সবসময় জনপ্রিয়। জ্যাকার্ড, কটন বা সিল্ক ব্লেন্ড ফেব্রিকের পাঞ্জাবি এই সময়ে বেশ ট্রেন্ডি। পাশাপাশি ফিউশন লুকও এখন জনপ্রিয় যেমন পাঞ্জাবির সঙ্গে ওয়েস্টার্ন কাটের জ্যাকেট বা কোট। এতে ট্র্যাডিশনাল লুকে আসে আধুনিকতার ছোঁয়া।
সব মিলিয়ে, ফল মৌসুমে পুরুষদের পোশাক মানে হলো আরামদায়ক ফেব্রিক, ট্রেন্ডি কাট আর রঙের সঠিক সমন্বয়।
অ্যাকসেসরিজ ও ফ্যাশন টিপস
ফল মৌসুমে শুধু পোশাকই নয়, পুরো লুককে স্টাইলিশ করে তোলে সঠিক অ্যাকসেসরিজ। হালকা ঠাণ্ডা আর আরামদায়ক আবহাওয়ায় ছোটখাটো অ্যাড-অনস লুককে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়।
স্কার্ফ, শ্রাগ ও হালকা জ্যাকেট
ফলে স্কার্ফ, শ্রাগ বা হালকা জ্যাকেট এখন বেশ জনপ্রিয়। এগুলো শুধু ঠাণ্ডা থেকে হালকা সুরক্ষা দেয় না বরং পোশাকে আনে বাড়তি স্টাইল। সাধারণ টিউনিক বা শার্টের ওপর একটা রঙিন স্কার্ফ কিংবা নিউট্রাল টোনের শ্রাগ যোগ করলে পুরো লুকই বদলে যায়। ছেলেদের জন্যও লাইটওয়েট জ্যাকেট বা কটন ব্লেজার দারুণ মানায়।
ব্যাগ ও জুতায় মৌসুমি ছোঁয়া
লুক সম্পূর্ণ করতে ব্যাগ আর জুতার ভূমিকা আলাদা। ফলে ক্রসবডি ব্যাগ, টোট বা লেদার স্টাইলের ব্যাগ বেশি মানায়। আর জুতার মধ্যে লোফার, স্নিকার্স বা ক্ল্যাসিক ফ্ল্যাটস সহজেই যেকোনো আউটফিটের সঙ্গে ম্যাচ করে যায়। রঙের ক্ষেত্রেও মৌসুমি টোন বেছে নিলে ফ্যাশন লুক আরও জমে ওঠে।
সব মিলিয়ে স্কার্ফ, জ্যাকেট, ব্যাগ কিংবা জুতা সবকিছুতে সামান্য যত্ন নিলেই আপনার ফলের ফ্যাশন লুক হবে একেবারে সম্পূর্ণ।
ফল মৌসুমের ফ্যাশন মানে একসঙ্গে আরাম আর স্টাইল ধরে রাখা। হালকা কিন্তু আরামদায়ক ফেব্রিক, মৌসুমি রঙ আর সঠিক অ্যাকসেসরিজ মিলেই এই সময়ের ট্রেন্ড তৈরি হয়। মেয়েদের জন্য টিউনিক, কুর্তি বা ওয়েস্টার্ন ফিউশন আর ছেলেদের জন্য শার্ট, চিনো বা ট্রেন্ডি পাঞ্জাবি সবকিছুতেই আছে নতুনত্বের ছোঁয়া। তাই বলা যায়, ফলের ফ্যাশনে নিজের পছন্দ আর আরামকেই রাখুন অগ্রাধিকার, তাহলেই প্রতিটি লুক হবে সহজ, স্টাইলিশ এবং একেবারে ইন-ট্রেন্ড।
– ফাতেমাতুজ্জোহরা আফিয়া






